সব খাবারের সেরা কিনোয়াঃ
বাংলাদেশে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের পছন্দের তালিকায় তাই যুক্ত হচ্ছে পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বতমালার চাষ করা প্রোটিন সমৃদ্ধ শস্যদানা কুইনোয়া অথবা কিনোয়া।
এটি মূলত ধান বা গমের মতই এক ধরনের বীজ। ভাত বা রুটি খেতে খেতে মুখে যদি অরুচি ধরে যায় তাহলে কিনোয়া হতে পারে উত্তম বিকল্প। এটি একটি সুষম খাদ্য। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি সিক্স, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়ামসহ বিভিন্ন খনিজ পদার্থ এবং ফাইবার রয়েছে। প্রায় সকল প্রকার পুষ্টি গুণ আছে বলে কিনোয়া ‘সুপার ফুড’ হিসেবে পরিচিত।
হোল গ্রেন কাউন্সিলের তথ্য অনুসারে, এটি হল গ্লুটেন ফ্রি হোল গ্রেন কার্বোহাইড্রেট। স্পষ্ট কথায় যাকে বলা যায় বন্ধু কার্বোহাইড্রেট। এতে যেমন কার্ব আছে, তেমনই প্রোটিনে ভরপুর। শস্য না হয়েও যেহেতু শস্যের মতোই কাজ করে, তাই অনেকেই একে সিউডো সিরিয়ালও বলে থাকেন। সাদা, লাল ও কালো— মূলত এই তিন ধরনের কিনোয়া পাওয়া যায়। সাদা কিনোয়া সহজপ্রাপ্য। স্যালাড জাতীয় খাবারের জন্য লাল কিনোয়া কিনতে পারেন। এটা রান্নার পরেও একই রকম দেখতে থাকে। লাল, সাদার তুলনায় কালো কিনোয়া বেশি মিষ্টি হয়। পাওয়া যায় কিনোয়া ফ্লেক্স ও কিনোয়া ফ্লাওয়ার।
মাইগ্রেনের ব্যথা থেকে স্বস্তি: অনেকেই মাইগ্রেনের অসহ্য রকম যন্ত্রণা দীর্ঘদিন ধরে সহ্য করে যাচ্ছেন। এর জন্য বহু ওষুধ খেয়েও আশানুরূপ ফল যারা পাচ্ছেন না তারা কিনোয়ার দ্বারস্থ হতে পারেন। এটি মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্ত চলাচলে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্কের নালিগুলোকে শিথিল করে। যার ফলে মাইগ্রেনের ব্যথা কম হয়। তাছাড়াও কিনোয়া ম্যাগনেশিয়ামের ভালো উৎস যা মাইগ্রেনের ব্যথা অনেকাংশেই দূর করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: সুগারের সমস্যা থাকা রোগীদের অনেক কিছুই খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হয়। তবে তাদের খাদ্যতালিকায় নতুনভাবে যুক্ত হতে পারে কিনোয়া। এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়তে দেয় না। ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে শরীর সুস্থ রাখে।
রক্ত স্বল্পতা দূর করা: বিভিন্ন কারণে মানবদেহে রক্তের পরিমাণ কম থাকতে পারে। এই রক্ত স্বল্পতার সমস্যা দূর করতে কিনোয়া বেশ কার্যকর। কারণ এতে রয়েছে আয়রন। তাছাড়াও এর মধ্যে থাকা বিভিন্ন খনিজ উপাদান মানব দেহে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়তা করে। এটি রক্তে স্বাভাবিক অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং লোহিত রক্তকণিকা গুলি বৃদ্ধি করে।
ত্বক ও চুলের সুস্থতায়: আমরা সকলেই জানি চুলের প্রধান উপাদান প্রোটিন। এই প্রোটিনের যোগান অনেকাংশেই পূরণ করতে পারে কিনোয়া। চুল পড়ে যাওয়া, ভেঙে যাওয়া, উঠে যাওয়ার মতন গুরুতর সমস্যা থেকে চুলকে রক্ষা করতে পারে কিনোয়াতে থাকা প্রোটিন। ক্ষতিগ্রস্ত চুল ঠিক করে নতুন চুল গজাতেও এটির ভূমিকা অতুলনীয়।
বলিরেখা দূর করা: কিনোয়াতে থাকা ভিটামিন বি ত্বকে বলিরেখা পড়তে দেয় না। ফলে চামড়ায় বয়সের ছাপ কম দেখা যায়। ব্রণসহ নানা সমস্যা থেকে এটি ত্বককে রক্ষা করে দীর্ঘদিন সজীব রাখতে সাহায্য করে।
ওজন কমাতে: এই শস্যদানায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা ধীরে ধীরে হজম হয় এবং শরীরে কোনো খাবারকে জমতে দেয় না। এটি সাধারণত ভাত বা রুটির মতন সহজেই হজম হয়ে যায় না। তাই এটি পেটের ভেতরে গেলে পেটকে অনেকক্ষণ ভর্তি রেখে বাড়তি খাবারের চাহিদা কমাতে পারে। সুতরাং কিনোয়া খাবারের তালিকায় রাখলে কাঙ্ক্ষিত সময়ে ওজন কমিয়ে শরীর সুস্থ থাকা যায়।
রন্ধনপ্রণালীঃ
এ বার প্রশ্ন হল কী ভাবে রাঁধবেন এই হোল গ্রেন? তা খেতে কেমন? কিনোয়া অনেকটা চাল, গম, যবের মতোই। ফলে রন্ধনপ্রণালীও সে রকমই। কিনোয়া দিয়ে স্যালাড থেকে শুরু করে বিরিয়ানি, রুটি, পিৎজ়া পর্যন্ত তৈরি করা যায়। তা যেমন সুস্বাদু, তেমনই স্বাস্থ্যকর। তবে কিনোয়া ভাতের চেয়ে তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয়। আবার কিনোয়ার রুটি করতে চাইলে কিনোয়া ফ্লাওয়ার কিনে নিতে পারেন। আটা মাখার মতোই কিনোয়া মেখে নিতে হবে। অবশ্যই তা গরম জল দিয়ে। সুবিধের জন্য কিনোয়ার কিছু রেসিপি দেওয়া হল।
কিনোয়া বিরিয়ানিঃ
উপকরণ: ছোট এঁচোড় ১টি, টক দই আধ কাপ, আদা-রসুন বাটা ১ চা চামচ, পেঁয়াজ ১ টি, বেরেস্তা ২ টেবিল চামচ, ঘি ২ টেবিল চামচ, ধনে গুঁড়ো ১ চা চামচ, গরম মশলা গুঁড়ো ১ চা চামচ, কেশর ৭-৮টি, কেওড়া জল আন্দাজ মতো, ধনে পাতা ও পুদিনা পাতা প্রয়োজন মতো, নুন স্বাদ মতো।
প্রণালী: প্রথমে কিনোয়া ধুয়ে জলে ভিজিয়ে রাখুন। অন্য দিকে এঁচোড় ধুয়ে পরিষ্কার করে ডুমো ডুমো করে কেটে নিতে হবে। এ বার কড়াইয়ে ঘি গরম করে তাতে একে একে পেঁয়াজ কুচি, আদা-রসুন বাটা দিয়ে কষতে থাকুন। একটি বাটিতে টক দই, ধনে গুঁড়ো, গরম মশলা গুঁড়ো ও নুন মিশিয়ে রাখুন। পেঁয়াজ নরম হয়ে এলে কড়াইয়ে এই বাটির মিশ্রণ ঢেলে দিন। মশলা কিছুটা কষে এঁচোড় দিন। এঁচোড় অর্ধেক সিদ্ধ হয়ে এলে একটি ছোট হাঁড়িতে বিরিয়ানির মতো একটা কিনোয়ার স্তর, কিছুটা এঁচোড়ের স্তর, আবার কিনোয়ার স্তর দিয়ে সাজিয়ে নিন। উপর থেকে ছড়িয়ে দিন কেওড়া জল, কেশর, ধনে পাতা ও পুদিনা পাতা। এ বার হাঁড়ির মুখে ঢাকা দিয়ে দম দিন। মিনিট পনেরো-কুড়ি রান্না করলেই তৈরি হয়ে যাবে এঁচোড় দিয়ে কিনোয়া বিরিয়ানি।
নাটি কিনোয়া স্যালাডঃ
উপকরণ: কিনোয়া ১ কাপ, লেটুস পাতা ৩টি, অলিভ অয়েল ৩-৪ চা চামচ, কাসুন্দি ১ চা চামচ, সরষের তেল ১ চা চামচ, রোস্টেড আমন্ড ১ টেবিল চামচ, রোস্টেড আখরোট ১ টেবিল চামচ, বেদানা ৩ টেবিল চামচ, তাল পাটালি স্বাদ মতো, নুন পরিমাণ মতো।
প্রণালী: প্রথমেই কিনোয়া নুন জলে সিদ্ধ করে নিতে হবে। এর মধ্যে একে একে আমন্ড, আখরোট, বেদানা, কাসুন্দি, সরষের তেল, নুন ও তাল পাটালি মিশিয়ে নিতে হবে। এ বার প্লেটের উপরে লেটুস সাজিয়ে তার উপরে এই স্যালাড রাখুন।
উপর থেকে অলিভ অয়েল ছড়িয়ে দিন। তৈরি নাটি কিনোয়া স্যালাড।